জবা ফুলের ইংরেজি নাম : China Rose, Hibiscus বা Shoe Flower. বৈজ্ঞানিক নাম হিবিস্কাস রোসা-সিনেন্সিস। জবা Malvaceae গোত্রের অন্তর্গত একটি চিরসবুজ পুষ্পধারী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। ফুলটি দেখতে অনেকটাই সাদামাটা ধরনের এবং গন্ধহীন। কিন্তু এর রয়েছে অসাধারণ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা। আসুন জেনে নিই জবা ফুল আমাদের কি ধরনের উপকার করে থাকে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে :
জবা ফুলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামক উপাদানটি রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। সাধারণত জবা ফুলের তৈরি চা বা অন্যান্য যেকোনো ভাবে জবা ফুল খেলে দেহে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে এবং শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে।
চুল কালো করে :
নারিকেল তেলের সাথে জবা ফুল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুল কালো হয় এবং চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা পায়। প্রাকৃতিকভাবেই এই ফুলটি রোদের তাপে চুল ধূসর হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়।
শক্তি বৃদ্ধি :
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ জবা ফুল দেহের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং প্রাকৃতিক শারীরিক সুস্থতা প্রদান করে।
বয়স ধীর গতিতে বৃদ্ধি পায় :
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ জবা ফুল শুধু ক্যান্সার প্রতিরোধই করে না নিয়মিত এই জবা ফুল আহারে আমাদের বয়স বাড়ার প্রবণতাকে ধীর গতি সম্পন্ন করে তুলতে সহয়তা করে। ফলে এই জবা ফুল একজনকে চিরযৌবন এনে দিতে পারে।
ব্রণ উপশম :
ব্রণের সমস্যায় অনেকেই পড়ে থাকেন। বিভিন্ন ব্রণ প্রতিরোধক উপকরণেও এটি উপশম করা সম্ভব হয় না। এর জন্য প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন জবা ফুল অনেক উপকারী। কেননা প্রাকৃতিক অ্যান্টি ইনফ্ল্যামাটরি উপাদান এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই জবা ফুল ব্রণের সমস্যা প্রাকৃতিকভাবেই নির্মূল করে থাকে।
হজমে সহায়তা :
জবা ফুল হজমেও সহায়তা করে থাকে। প্রতিদিন নিয়ম করে এই জবা ফুল খেলে শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে এবং হজমক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে।
চুল পড়া বন্ধ করে :
প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন এই জবা ফুল চুলে বিভিন্ন পুষ্টি প্রদান করে চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে উজ্জ্বল আর ঝলমলে করে তোলে।
ঠান্ডা উপশম :
জবা ফুলে ভিটামিন সি রয়েছে। ফলে এই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ জবা ফুল হালকা ঠান্ডা লাগা, গলা ব্যথা বা মাথাব্যথা সারিয়ে ফেলতে পারে। এর জন্য সবজি হিসেবে বা এমনিই খাওয়া যেতে পারে এই জবা ফুল।
কোলেস্টেরল মাত্রা কমিয়ে আনে :
জবা ফুল আমাদের শরীরের কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে এনে হার্টের সমস্যা দূর করে।
শরীরে তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে :
আমাদের শরীরের তরলের পরিমাণ বেশি যেগুলোর ভারসাম্য ঠিক না থাকলে বিভিন্ন অসুস্থতা দেখা দেয়। জবা ফুল শরীরের এই তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে শরীরকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখে।
বমি করতে চাইলে :
যে খাদ্য খেতে অভ্যস্থ নয় বা মাছি, চুল অথবা এমন কোন কিছু পেটে গিয়েছে, তাতে বমির উদ্রেগ হয়, বমি হচ্ছে না; এক্ষেত্রে ৪/৫ টি জবা ফুল নিয়ে বোঁটার সঙ্গে যে সবুজ ক্যালিকাস অংশ থাকে, এই অংশ টাকে বাদ দিয়ে ফুল অংশটাকে পানি ও চিনি পরিমাণমত দিয়ে চটকে সরবত করে দিনে ২/১ বার খেলে বমি হয়ে ওগুলি বেরিয়ে যাবে।
ঘন ঘন প্রস্রাব :
যারা প্রচুর পরিমাণে পানি পান করে আবার ঘন ঘন প্রস্রাব করে অথচ ডায়াবেটিস রোগী নয়, এই ক্ষেত্রে জবা গাছের ছালের রস এক কাপ পানির সাথে পরিমাণমত চিনিসহ মিশিয়ে ৭/৮ দিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
টাক পোকা রোগ :
চুল স্বাভাবিক আছে অথচ ফাঙ্গাসে কিছু জায়গা চুল উঠে টাক হয়ে গেছে এ অবস্থায় জবাফুল বেটে ওখানে লাগালে কিছু দিনের মধ্যে চুল উঠে যাবে। এক/ দুইটা ফুল বেটে ৭/৮ দিন যে কোনো সময় লাগাতে হবে এবং দুই/ এক ঘণ্টা রাখতে হবে অথবা যতক্ষণ সম্ভব রাখতে হবে।
চোখ উঠা :
চোখের কোণে ক্ষত হয়ে পুঁজ পড়ছে। সে ক্ষেত্রে জবা ফুল বেটে চোখের ভিতরটা বাদ দিয়ে চোখের উপর ও নিচের পাতায় গোল করে লাগিয়ে দিলে উপকার পাওয়া যায়। দিনের যে কোনো সময় এক /দুইটা ফুল বেটে ৭/৮ দিন লাগাতে হবে এবং এক ঘন্টা রাখতে হবে।
হাতের তালুর চামড়া উঠা :
শীতকালে হাতের তালুর চামড়া উঠে খসখসে হয়ে গেলে, জবা ফুল তালুতে মাখলে খুব উপকার পাওয়া যায়। দিনে দুই তিনবার এক/ দুইটা ফুল হাতের মধ্যেই ডলে ডলে লাগাতে হবে। লাগিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা যাবে। যতক্ষণ সম্ভব রাখতে হবে।
ফটো : কে এম মিঠু, তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট।